স্টাফ রিপোর্টার: অবরোধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় লোক সমাগম নেই বললেই চলে। জনশূণ্যতা আর সুনশান নিরবতা বিরাজ করছে পরিষদ এলাকায়। কয়েকটি দফতরের কর্মকর্তা যথাসময়ে অফিসে আসলেও অনেক অফিসে সকাল সাড়ে দশটায়ও তালা ঝুলতে দেখা গেছে। কোনো কোনো অফিস আবার খোলা থাকলেও নেই সেই অফিসের বড় কর্মকর্তা। কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে সেবা প্রত্যাশীরা কাজ না সেরেই মনখারাপ করে ফিরে যাচ্ছেন বাড়ী। এভাবেই ঢিলেঢালাভাবে চলছে উপজেলা প্রশাসনের দাপ্তরিক কাজকর্ম।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা ৭২ ঘন্টা (৩১ অক্টোবর-২ নভেম্বর পর্যন্ত) অবরোধের আজ তৃতীয় ও শেষ দিনে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা নিজ নিজ অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। নিজ কর্মস্থল এলাকায় রাত্রিযাপনের নিয়ম থাকলেও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা থাকেন জেলা শহরে। যারফলে অবরোধ চলাকালে রাস্তায় ঝামেলায় পড়ার সম্ভাবনায় কেউ কেউ অফিস করছেন না। অবরোধে ঝুঁকি নিয়ে দুয়েকজন কর্মকর্তা অফিসে আসলেও বেশিরভাগ কর্মকর্তা জেলা সদরে কাজের অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সুত্রে জানা গেছে। আবার যারা আসছেন তারাও যথাসময়ে আসছেন না বলেই অভিযোগ রয়েছে। সরকারী বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েও সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত না থাকায় দুর দুরান্ত থেকে আসা সেবা গ্রহিতারা পড়ছেন নানান ভোগান্তিতে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি না আসায় সেবা গ্রহণ করতে না পেরে অনেককেই বাড়ী ফিরে যেতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (০২ নভেম্বর) সকালে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে দশটায়ও অনেক কর্মকর্তা নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত হননি। যারা উপজেলা পরিষদের ভেতরে সরকারী বাসভবনেই থাকেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ যথাসময়ে নিজ অফিসে উপস্থিত হতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সাড়ে দশটার মধ্যেও যেসকল কর্মকর্তা নিজ অফিসে উপস্থিত হতে পারেননি, তারা হলেন: উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জোবায়ের হাসান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাকিনা বেগম, নির্বাচন কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহনাজ আক্তার, সমবায় অফিসার ভূঁইয়া মোহাম্মদ শাহীনুর রহমান, সমাজসেবা অফিসার সাহিদুর রহমান, হিসাব রক্ষণ অফিসার মো: আল এমরান, তথ্য কর্মকর্তা ফাতেমা আক্তার, বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেচ)শাহাজালাল মিয়া, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার অপূর্ব সাহা।
এদিকে সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা নির্বাহী প্রকোশলী মো: নুরুজ্জামান এর অফিস খোলা থাকলেও তার চেয়ারটি খালি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী সকালে দক্ষিণ চৌদ্দগ্রামে একটি প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছেন। তবে সকাল ঠিক সাড়ে নয়টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন তার অফিসে প্রবেশ করেন। বড় কর্তার সাথে তালমিলিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জুবায়ের আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সুব্রত রায়, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: আতাউর রহমান মজুমদার, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: কামাল উদ্দিন ভূঁঞাকে নিজ নিজ অফিসে যথাসময়ে উপস্থিত থেকে দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে দেখা গেছে। কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি ও বিলম্বে আসার কারণে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও তাদের নিজ নিজ কাজ সারতে না পেরে ভাঙ্গা মন নিয়ে বাড়ী ফিরে যেতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন বলেন, ‘চলমান অবরোধ কর্মসূচীতে অনেকদিন ব্যক্তিগতভাবে আমি রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। এরপরও পরদিন সকালে যথাসময়ে (সকাল ১০টার আগেই) অফিসে উপস্থিত থাকি। উপজেলা প্রশাসনের অন্য কেউ যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত না থাকার বিষয়টি খবর নিয়ে দেখবো।’