মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: লাল টুকটুকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমারোহে নবরূপে সেজেছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের প্রকৃতি। গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে যখন মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিতে এনেছে নতুন সাজ। চারিদিকে সবুজের বুক চিরে রক্তিম লাল আভা জানান দিচ্ছে প্রকৃতির নয়নাভিরাম রূপের। দেশের লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডিভাইডার সহ চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন বিদ্যাপিঠ ও সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রাঙ্গণকে কৃষ্ণচূড়া ফুল সাজিয়েছে এক অপরূপ সাজে। প্রকৃতি যেন সেজেছে কৃষ্ণচূড়ার রঙে। পরিবেশে ফিরেছে নতুন সৌন্দর্য্য। মনকাড়া এ প্রকৃতি ছুঁয়েছে প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়ের গহীনতম অংশ।
মহাসড়কের দুইপাশে বিস্তৃত মাঠ, মাঠে সবুজ ঘাস। সড়কের মাঝখানের ডিভাইডারে লাগানো কৃষ্ণচূড়া গাছে লাল ফুলের সমারোহ। গ্রীষ্মের তপ্ত রোধে হিমেল বাতাস আর রঙিন কৃষ্ণচূড়া গাছের শীতল ছায়া। এ যেন প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য্য। বৃক্ষ প্রেমী সহ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে নবরূপে সজ্জিত এ প্রকৃতি। প্রকৃতির এই রক্ত রঙিন পাগলপারা সৌন্দর্য্য শুধু গ্রীষ্মেই পাওয়া যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চোখ ধাঁধানো টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়ায় সেজেছে গ্রীষ্মের প্রকৃতি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, বৈশাখের রৌদ্দুরের সবটুকু উত্তাপ গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে রক্তিম পুষ্পরাজি। সবুজ চিরল পাতার মাঝে যেন আগুন জ্বলছে। গ্রীষ্মের ঘাম ঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করে এই সৌন্দর্য্য। শীতল হাওয়ায় জুড়ায় প্রাণ।
কৃষ্ণচূড়া বাঙালির কাছে অতিপরিচিত একটি ফুল। বাঙালির কবিতা, সাহিত্য, গান ও নানা উপমায় এর রূপের মোহনীয় বর্ণনা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মোহনীয় রূপে প্রকৃতির শোভা বর্ধনকারী এ বৃক্ষ এখনো গ্রামবাংলার পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের ছোঁয়া পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষ্ণচূড়া তার রক্তিম আভা ছড়ানোর মাধ্যমে জানান দেয়- সে এখনও টিকে আছে প্রকৃতিকে সাজাবে বলে। যুগ যুগ ধরে প্রকৃতির ঐতিহ্য বহন করছে কৃষ্ণচূড়া।
প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এ বৃক্ষ যেন এখন বাঙালির ঐতিহ্যেরই একটা অংশ হয়ে গেছে সবার অগোচরে। এ দেশে এসে পরিচিত হয়েছে নতুন নামে। এর সবচেয়ে বড় খ্যাতি হচ্ছে মোহনীয় রক্তিম আভা। সবুজের বুক চিরে বের হয়ে আসা লাল ফুল এতটাই মোহনীয় যে, এক পলক দেখতে পথিচারীরাও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হন।
কৃষ্ণচূড়া ফুলে রঙিন হয়েছে সমগ্র চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রায় প্রতিটি স্থান। মহাসড়ক সহ প্রতিটি বাইপাস সড়কে দেখা মিলেছে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আভা। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষ্ণচূড়া তার লাল আবীর নিয়ে পাকা সড়কের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় ফুটেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। দেখে মনে হচ্ছে কৃষ্ণচূড়া তার সমস্ত রঙ প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।
স্থানীয়রা সহ অনেকেই সড়কের পাশের কৃষ্ণচূড়া তলায় আসেন ছবি তুলতে। আবার অনেককে দেখা যায় বিশ্রাম নিতে। বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ থেকে আসা দিনমুজুরদের প্রায় প্রতিনিয়ত দেখা যায় সড়কের পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে একটু শীতল হাওয়া উপভোগ করতে। তীব্র গরমে তারা প্রশান্তি খোঁজেন কৃষ্ণতলায়।
মো: মোশাররফ হোসেন নামের এক পথিক বলেন, কৃষ্ণচূড়া গাছের তলে পরিবেশটা খুবই ঠান্ডা। এখানে বাতাসে গা জুড়ায় পথিক সহ স্থানীয়রা। এছাড়া অনেকেই ঘুরতে, প্রকৃতি দেখতে ও ছবি তুলতে আসেন এখানে। আবার অনেকেই গাড়ি থামিয়ে বিশ্রাম নেন কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে বসে। একটুখানি শীতল হাওয়া যেন তাদের হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া বিলিয়ে দেয়।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষ্ণচূড়ার আদি নিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে সক্ষম। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধুমাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়। কৃষ্ণচূড়া আপন মহিমায় প্রকৃতিতে রঙিন করে তোলে।