স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ নুসরাত জাহান মীম (২১) কে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে তার মা জাহান আরা বাদী হয়ে নিহতের স্বামী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও ননদকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। গত মঙ্গলবার কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-০১ এ তিনি এ মামলা দায়ের করেন। এর আগে ঘটনার দিন নিহতের শ্বশুর সহিদ উল্লাহ্ ভূ্ইঁয়া কৌশলে নুসরাতের বাবার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত না করিয়ে দাফন করে দেয়।
আদালতে দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের বাতিসা গ্রামের মহসিন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে নুসরাত জাহান মীমকে গুনবতী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের সহিদ উল্লাহ্ ভূঁইয়ার ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ্ ভূঁইয়া রিয়াদ এর নিকট শরীয়ত সম্মতভাবে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে সামাজিকভাবে বিবাহ্ দেয়া হয়। বিয়ের সময় নুসরাতের বাবা-মা বর পক্ষকে স্বর্ণালঙ্কার, ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ প্রায় চার লাখ টাকার জিনিসপত্র দেয়। বিয়ের পর নুসরাত কিছুদিন সুখে শান্তিতে স্বামীর সংসার করতে পারলেও ছয় মাস পরই তার সংসারে নেমে আসে অশান্তির কালো থাবা। শ^শুর বাড়ীর লোকজনের চাপে পড়ে স্বামীর ব্যবসা প্রসারসহ বিভিন্ন অজুহাতে নুসরাত তার বাবার বাড়ি থেকে কয়েক দফায় নগদ প্রায় তিন লাখ টাকা এনে দেয় তার স্বামীকে। এতেও সন্তুষ্ট হয়নি নুসরাতের পরধন লোভী স্বামী রিয়াদ। রিয়াদ তার পরিবারের লোকজনের কু-পরামর্শে আরেক দফায় ব্যবসার মূলধন বাড়ানোর কথা বলে বাবার বাড়ি থেকে আরো পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে নুসরাতকে অব্যাহতভাবে চাপ দেয়। এতে সে অস্বীকৃতি জানালেই ঘটে বিপত্তি। বিষয়টি নিয়ে নুসরাতের স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন বিভিন্ন সময় তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে সুযোগ বুঝে স্বামী রিয়াদসহ তার পরিবারের লোকজন নুসরাতকে মারধরসহ শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনে নুসরাতের গলা, হাতের তালুসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের নীলাফুলা জখম ও ক্ষতের চিহৃ দেখা যায়। নির্যাতনের অতিমাত্রায় অবস্থা বেগতিক দেখে নুসরাতকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শয়ন কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। পরে নুসরাতের স্বামী রিয়াদ তার শ^শুরকে মুঠোফোনে কল করে জানায় নুসরাতের শারীরিক অবস্থা ভালো না, তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হবে। খবর পেয়ে নুসরাতের বাবা-মা সেখানে ছুটে গিয়ে নুসরাতের নিথর দেহ ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখেন। পরে নুসরাতের শ্বশুর সহিদ উল্লাহ্ সু-কৌশলে তার বাবার কাছ থেকে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। এরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরীর পর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নুসরাতের মা জাহান আরা বলেন, ‘আমার মেয়েকে তারা যৌতুকের টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমাদের কাছ থেকে দু’টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তারা লাশের ময়নাতদন্ত না করিয়ে দাফন করে দেয়। লাশের ময়নাতদন্ত ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই’।
মামলার প্রধান আসামী ও নিহত নুসরাতের স্বামী মোহাম্মদ উল্লাহ্ ভূঁইয়া রিয়াদ বলেন, ‘নুসরাতের মানসিক সমস্যা ছিল। এ কারণেই সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। তার পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই লাশ দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে’।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। সুরতহাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই প্রতীয়মান হয়। উভয়পক্ষের সম্মতিতে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে’।