চৌদ্দগ্রামে জুমআর খুতবা চলাকালীন ইমাম-মুয়াজ্জিনের উপর হামলা

0
460

স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জুমআর খুতবা চলাকালীন সময়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনের উপর হামলা হয়েছে। মুসল্লিদের সহযোগিতায় ইমাম রেহাই পেলেও এ ঘটনায় মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ আব্দুল কাদের সহ আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন সাধারণ মুসল্লি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের কনকপুর ব্র্যাক অফিস সংলগ্ন জামে মসজিদে। সংবাদ পেয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই অনুপ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছে মসজিদের মুসল্লি সহ স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কনকপুর মদিনাতুল উলুম মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি নোমান ওসমানী দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ মুন্সীরহাট পূর্ববাজার ব্র্যাক মোড়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত কনকপুর জামে মসজিদে বেশ সুনামের সহিত ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গত শুক্রবার (২৩ জুন) তিনি জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে বহিরাগত লোকজনসহ কতিপয় উৎশৃঙ্খল মুসল্লি প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে অতর্কিতভাবে তার উপর হামলা চালায়। হামলায় সচেতন মুসল্লিদের সহযোগিতায় তিনি বেঁচে গেলেও মসজিদের মুয়াজ্জিন সহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মসজিদের মুসল্লি সহ স্থানীয় সচেতন মহল।

এ বিষয়ে স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, ‘ডাক্তার শাহজালাল ও মাস্টার শাহআলম এর প্ররোচনায় জুগিরহাট গ্রামের মকবুল মুন্সীর ছেলে আবু বকর, আবু জাফর, আবু নসর, একই গ্রামের মৃত আমির আলীর ছেলে মোহর আলী, মোহাম্মদ ইউসুফ, মিয়াজী বাড়ীর আবুল কালাম মিয়াজী, ছেরাগ আলীর ছেলে সবজি বিক্রেতা কালা মিয়া, আম্বর আলীর ছেলে জামাল সহ কতিপয় উৎশৃঙ্খল মুসল্লি প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে অতর্কিতভাবে ইমাম সাহেবের উপর হামলা চালায়। ইমাম সাহেবকে বাঁচাতে গেলে সাধারণ মুসল্লিদের উপরও হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় মুয়াজ্জিন সহ কয়েকজন মুসল্লি আহত হয়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সোমবার সামাজিকভাবে বসার কথা রয়েছে। এ সময় তারা ইমাম-মুয়াজ্জিনের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এ বিষয়ে কনকপুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি নোমান ওসমানী বলেন, ‘প্রতি জুমআর মত ঐদিন আমি খুতবা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কতিপয় উৎশৃঙ্খল ও অনিয়মিত মুসল্লি লাঠিসোটা নিয়ে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে আমার উপর হামলা চালায়। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে মুয়াজ্জিন ও কয়েকজন মুসল্লি তাদের আক্রমণের শিকার হয় এবং আহত হয়। পরে সচেতন মুসল্লিদের সহযোগিতায় আত্মরক্ষায় মসজিদ ত্যাগ করতে বাধ্য হই। তারা কেন হামলা করেছে আমি তা জানিনা। আমি এখনও নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানাই।’

মসজিদের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, ‘মুসল্লিদের মধ্যে কয়েকজন লোক কমিটিতে থাকতে না পেরে ইমাম সাহেবের উপর হামলার মত একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। খবর দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। সোমবার সামাজিকভাবে বসে এর সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।’

এ ব্যাপারে মসজিদের ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘মসজিদের ইমাম সাহেব মিলাদ-কিয়াম করতেন না। শবে মিরাজ, শবে-বরাত ও শবে ক্বদর পালন করতেন না। সেজন্য ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা ইমামের পরিবর্তন চায়। হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। বিগত সাত মাস ধরে সভাপতি ইমামের বেতন দিচ্ছেন। মসজিদ ফান্ডের আয়-ব্যয়ের হিসাব আছে। মিটিংয়ে বসলে তা উপস্থাপন করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে কল দিলে ডা. শাহজালালের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি (০১৮১৭-৩১৪১৮৫) বন্ধ পাওয়া যায়।

চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই অনুপ চক্রবর্তী জানান, ‘৯৯৯ এ কলের মাধ্যমে জুমআর খুতবারত অবস্থায় ইমামের উপর হামলার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উপস্থিত কমিটির লোকজন সহ মুসল্লিদের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে সামাজিকভাবে বিষয়টির সমাধানের আশ্বাস দেয়ায় পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।