চৌদ্দগ্রামে প্রবাসীকে পাগল সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তির অভিযোগ

0
742

স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু নামে এক প্রবাসীকে মানসিক রোগী সাজিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার শ্রীপুর গ্রামে। ভুক্তভোগী সৌদিআরব প্রবাসী ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু পৌরসভাধিন শ্রীপুর গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৭ বছর আগে ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু মুন্সীরহাট ইউনিয়নের পেঁছাইমুড়ি গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে নার্গিস আক্তারকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন ছুট্টু। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সৌদিআরব ও কুয়েতে ছিলেন। এ সময়ে সংসার খরচ ও ব্যাংকে জমা রাখার জন্য স্ত্রীর কাছে পর্যাপ্ত পরিমান রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা পেয়ে ছুট্টুর স্ত্রী নার্গিস আক্তার বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে। লোক মাধ্যমে শোনা যায়, বিয়ের আগেও এমন বেপরোয়া চলাফেরায় অভ্যস্ত ছিলো সে। গত ১১ মাস আগে ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু প্রবাস থেকে আসার পর স্ত্রী নার্গিস আক্তার তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে। নার্গিস আক্তার সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বলে তার স্বামী ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টুকে বাড়িতে বিল্ডিং ঘর নির্মাণের জন্য নামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে লোকজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন ছুট্টু। বর্তমানে ঘরের কাজ মোটামুটি শেষের দিকে। এদিকে সাংসারিক টানাপোড়নের একপর্যায়ে নার্গিস তার স্বামীকে ‘পাগল’ আখ্যা দিয়ে পরিবারের লোকজনসহ প্রতিবেশীদের নিকট প্রচার করতে থাকে। কখনো কখনো জোরপূর্বক ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয় এবং পাগল বলে ঘর থেকে বের করে দেয়। এছাড়া নার্গিস তার স্বামীকে সন্তানদের সাথেও দেখা করতে দেয় না। গত শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টু বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী নার্গিস আক্তার তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের সহযোগিতায় তাকে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়। এরপর গত ৪ জুলাই (সোমবার) ছালেহ আহাম্মদ ছুট্টুকে চৌদ্দগ্রাম হাইস্কুল মাঠের গরু বাজার থেকে স্ত্রী নার্গিস আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন লোক জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে ইনজেকশন পুশ করে নাঙ্গলকোট বাজারস্থ জামান’স ক্লিনিকে ডা. এ এইচ এম মনজুরুল হকের তত্ত্বাবধানে মানসিক রোগী হিসেবে ভর্তি করায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে ছুট্টুকে দেখার জন্য গত বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) তার আত্মীয়-স্বজনরা ওই হাসপাতালে গেলে দায়িত্বে থাকা বশির উদ্দিন বলেন, স্ত্রী নার্গিস আক্তার আসলেই ছালেহ্ আহাম্মদ ছুট্টুকে দেখানো হবে। কিছুক্ষণ পর নার্গিস আক্তার ছোট ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে ছুট্টুকে স্বজনদের সাথে দেখা করতে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উপস্থিত স্বজন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সামনে ছুট্টু নিজেকে শারীরিকভাবে সুস্থ দাবি করে বলেন, ‘তার স্ত্রী, খায়ের, মুন্না, আব্দুর রহমান, রুহুল আমিন সহ অজ্ঞাতনামা আরো লোকজন তাকে জোরপূর্বক ইনজেকশন পুশ করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। এ সময় তিনি আরও বলেন, স্ত্রীর নিকট প্রবাস থেকে পাঠানো টাকার হিসেব চাওয়ায় আমাকে জোরপূর্বক এখানে ভর্তি করানো হয়েছে’।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ হাসান বলেন, ‘ছালেহ আহাম্মদ ছুট্টুর পারিবারিক কলহ নিয়ে অনেকবার শালিস হয়েছে। উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে উভয়ে ভালোভাবে চলবে বলে স্বীকারোক্তি দেয়, কিন্তু পরে তার উল্টে করে তারা’।

নাঙ্গলকোট বাজারস্থ জামান’স ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে তাকে সুস্থ্য মনে হয়েছে। কিন্তু স্ত্রী কর্তৃক ভর্তি করানোয় তাকে আমরা কয়েকদিন অবজারবেশনে রেখে চিকিৎসা করেছি। এখন সে আগের থেকেও ভালো আছে’।