স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গরম ও বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাতে সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে সাড়ে ৯টায় শ্রেণি পাঠদান শুরু করে ঠিক ১১টার সময় মাদরাসা ছুটি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ কাজে অধ্যক্ষকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সহ কতিপয় অসাধু ও সুবিধাভোগি শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মাদরাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করায় ধনুসাড়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মো: আব্দুল জলিল মিয়াজী স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে ও কয়েকজন শিক্ষককে মতে রেখে প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষককে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপে অধ্যক্ষের কক্ষে স্থানীয়দের সাথে রুদ্ধধার বৈঠক শেষে আগামী রোববার থেকে যথানিয়মে মাদরাসা পরিচালনার আশ^াস দেন অধ্যক্ষ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে এখনো ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা গেছে, বিধি মোতাবেক সকাল ১০টায় শ্রেণি পাঠদান শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে ধনুসাড়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু হয়ে ঠিক ১১টায় শেষ করা হয়েছে। মাদরাসা অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তে এমন কাজ চলছে বন্যা পরবর্তী সময় থেকেই। বিষয়টি স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও সচেতন মহলের নজরে এলে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেন তারা। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে তাড়াতাড়ি মাদরাসা ছুটি দেওয়ায় কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সহ শিক্ষকদের রোষানলে পড়েন স্থানীয়রা। এ সময় তারা স্থানীয়দের সাথে অশোভন আচরণ ও অসদ্ব্যবহার করেন বলেও জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মাদরাসার নিকটস্থ ব্যবসায়ী ও মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য আবুল কাশেম সর্দার, বর্তমান কমিটির সদস্য মো: ফরিদ উদ্দিন, সমাজসেবক মমতাজ উদ্দিন, বাবুল মিয়া সহ স্থানীয়রা জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে মাদরাসা খোলা হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত মাদরাসা খোলা-বন্ধে সরকারি কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। সকাল সাড়ে ৯টায় মাদরাসা চালু করে দুপুর ১টার মধ্যেই ছুটি দিয়ে দেন অধ্যক্ষ। প্রায় প্রতিদিনই কয়েকজন শিক্ষক দেরী করে আসেন ক্লাসে। মাদরাসায় শ্রেণি পাঠদান চলাকালীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাহিরে ঘুরাঘুরি করে। যোহরের নামাজ না পড়েই অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি চলে যায়। বিষয়গুলোর প্রতিকার চেয়ে অধ্যক্ষ সহ সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষককে স্থানীয়রা জানালেও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু হয়। পরে দেখি এগারটার মধ্যেই মাদরাসা ছুটি হয়ে গেছে। অধ্যক্ষ সহ কয়েকজন শিক্ষককে সামনে পেয়ে আমরা এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় তারা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ও চড়াও হয়ে বলেন, আপনারা যা পারেন করেন। এ কথা বলে তারা সকলে মোটরসাইকেলযোগে মাদরাসা আঙ্গিনা ত্যাগ করেন। এরপর স্থানীয়দের মাঝে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয়রা বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে অবহিত করে। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কল পেয়ে অধ্যক্ষ ও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক মাদরাসায় ফিরে আসেন এবং স্থানীয়দের সাথে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আগামী রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে সরকারি বিধি মোতাবেক মাদরাসা পরিচালনার প্রতিশ্রæতি দেন অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে ধনুসাড়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ মো: আব্দুল জলিল মিয়াজী বলেন, প্রচন্ড গরম ও বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রেণি পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় সময়ের কিছুটা পূর্বে মাদরাসা ছুটি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের সাথে স্থানীয়দের ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো। পরে স্থানীয়দের সাথে বসে বিষয়টির সমাধান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মীর হোসেন বলেন, স্থানীয় একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে ধনুসাড়া মাদরাসার বিষয়টি অবগত হয়ে তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেছি। স্থানীয়দের সাথে সৃষ্ট ঝামেলার সমাধান করতে উনাকে বলা হয়েছে। পরে সমাধানও হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।