চৌদ্দগ্রামে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে ২৭ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন

0
1099

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। অধিকাংশ রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নে ২৭টির অধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিনামূল্যে দেড় শতাধিক সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে। বিষয়টি চৌদ্দগ্রামের সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। এ উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা মো: মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারী করোনার বাংলাদেশে চলছে তৃতীয় ঢেউ। সারাদেশের ন্যায় চৌদ্দগ্রামেও প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের একার পক্ষে এ মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে করোনা আক্রান্ত ও শ্বাসকষ্ট রোগীদেরকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মতো পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের ২৫টির অধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ সেবা অব্যাহত রেখেছে’।

পাঁচরা জনকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম পাটোয়ারী মুরাদ বলেন, ‘আমরা পৌর এলাকায় ৬টি সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন এ সেবা গ্রহীতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সহযোগিতা পেলে সিলিন্ডারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করব’।

ফেলনা হেলথ্ ফোরামের পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘আমরা ৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে ফ্রি অক্সিজেন সেবার কাজ শুরু করেছি। করোনার যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে এখন প্রতি ঘরে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা প্রয়োজন’।

চৌদ্দগ্রাম ইউনিটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইমাম হোসেন বলেন, ‘চৌদ্দগ্রাম সহ সারাদেশের করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ। করোনা ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগিদের কথা বিবেচনা করে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছি। প্রথম পর্যায়ে পাঁচটি সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করছি। প্রয়োজন অনুসারে ভবিষ্যতে সিলিন্ডার সংখ্যা বাড়ানো হবে’।

মুন্সিরহাট ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের মো: মোশারফ হোসেন বলেন, ‘চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আমার মায়ের অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় ‘চৌদ্দগ্রাম প্রবাসী সূর্য সন্তান’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা নিয়েছি। তাদেরকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। আমি তাদের এ সহযোগিতায় অত্যন্ত খুশি’।

চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া গ্রামের মো: ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাবার অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো হাসপাতালে অক্সিজেন পাইনি। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পেরে ‘আনন্দ সংঘ’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা সরাসরি এসে বাবাকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। আমি তাদের সেবায় মুগ্ধ’।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাসিবুর রহমান বলেন, চৌদ্দগ্রামে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালে প্রতিদিনই আক্রান্ত রোগীদেরকে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা চাই-তাদের এ উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে’।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে করোনা মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। আমি শুনে অত্যন্ত খুশি হলাম যে, সরকারের পাশাপাশি উপজেলার অনেকগুলো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করব-তাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কোন সহযোগীতা প্রয়োজন হলে আমি তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো’।