স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ভেজাল-নকল জ্বালানি তেল ও নিম্নমানের বিটুমিন তৈরীর অবৈধ কারখানায় র্যাবের অভিযানে আব্দুল মান্নান (৪৮) ও ফোরকান মাহমুদ (২৩) নামে দু’জনকে আটক এবং দুইটি তেলবাহী ট্রাক ও একটি ডিজেল ভর্তি পিকআপসহ বিপুল পরিমাণ চোরাই তেল ও পোড়া মবিল জব্দ করেছে র্যাব। আটককৃত মো: আব্দুল মান্নান উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের গুনবতী গ্রামের মো: আলম মিয়ার ছেলে এবং ফোরকান মাহমুদ নাঙ্গলকোট উপজেলার সাতবাড়িয়া এলাকার তপবন গ্রামের মো: মোস্তফার ছেলে। পরে আটককৃতদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪১ ধারা অনুযায়ী একজনকে এক বছর ও অপরজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
র্যাব জানায়, মঙ্গলবার (১৫ জুন) বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমিল্লা র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর উপ-পরিচালক ও কোম্পানী অধিনায়ক মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব এর নেতৃত্বে এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত “মেসার্স আলম এন্ড কোম্পানী” নামীয় ভেজাল-নকল জ্বালানি তেল ও বিটুমিন তৈরীর এ কারখানা সিলগালা করা হয়। এসময় কারখানায় কর্মরত মান্নান ও ফোরকান নামে দু’জনকে আটক করেছে র্যাব।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার গুনবতী ইউনিয়নের আলম মিয়ার ছেলে মো: আব্দুল হান্নান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এ কারখানায় অবৈধ উপায়ে পুরাতন মবিল, ব্লিচিং পাউডার ও সালফিউরিক এসিড দ্বারা পরিশোধন করে নকল ও ভেজাল ডিজেল, মবিল উৎপাদন করে বাজারজাত করতো। মবিল পরিশোধনের বর্জ্য নকল বিটুমিন হিসেবে অসাধু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করত বলে জানা যায়। জ্বালানি তেল ও নিম্নমানের বিটুমিন তৈরী করে আসছিলো। এছাড়াও মহাসড়কে চলমান লরি, কন্টিনার সহ বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভারদের সাথে গোপন চুক্তির মাধ্যমে কমদামে চোরাই জ্বালানি তেল কিনে গুদামজাত করে বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বেশি মুনাফায় বিক্রি করে আসছিলো।
এবিষয়ে কুমিল্লা র্যাব-১১ সিপিসি-২ এর উপ-পরিচালক ও কোম্পানী অধিনায়ক মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নকল জ্বালানি তেল ও নিম্নমানের বিটুমিন তৈরীর কারখানা সিলগালা করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এখানে পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্য দিয়ে পোড়া মবিলকে এসিডের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে জ্বালানি তেল ও নিম্নমানের বিটুমিন তৈরী করে আসছিলো একটি অসাধু চক্র। এঘটনায় দু’জনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। কারখানার মালিক আব্দুল হান্নান পলাতক রয়েছে। তাকে আটক করার জন্য র্যাব তৎপর রয়েছে”।
এবিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঞ্জুরুল হক বলেন,“ ‘মেসার্স আলম এন্ড কোম্পানী’ নামে একটি অবৈধ জালানি তেল কারখানা সিলগালা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করে তাদেরকে জেলহাজতে পেরণ করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল ও পোড়া মবিল এনে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন করে ভেজাল জ্বালানি তেল ও নিম্নমানের বিটুমিন তৈরী করে নানাভাবে বাজারজাত করে আসছিলো। এ বিষয়ে আটককৃতরা ভ্রাম্যমান আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে”।