স্টাফ রিপোর্টার: চৌদ্দগ্রামে তালাক দেয়ার পরও স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানি ও গাড়ী আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে আছমা আক্তার (২৬) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। এ কাজে তার বাবা আবু তাহের, বড় ভাই সালেহ আহমদ সহ পরিবারের লোকজন তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বলে জানান ভুক্তভোগি কামরুল হাসান বাবলুর পিতা রফিকুল ইসলাম। আছমা আক্তার কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৬নং ঘোলপাশা ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর নোটিশ প্রেরণ করেন। আদালতের নোটিশ পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এ কে খোকন উভয়পক্ষকে নিয়ে পরিষদে একাধিকবার বসেও বাদীপক্ষের অনাগ্রহের কারণে কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারেননি বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগি কামরুল হাসান বাবলুর পিতা রফিকুল ইসলাম লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানান, ‘কামরুল হাসান ও আছমা আক্তার ১৩ বছর পূর্বে পরিবারের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালোবেসে কোর্ট ম্যারিজের মাধ্যমে বিয়ে করেছিলো। মেয়ের বাবা-মা সহ পরিবারের প্রায় সবার বিরুদ্ধে থানায় মাদক মামলা রয়েছে। পরিবারটি মাদক কারবারে যুক্ত থাকায় আত্মমর্যাদা রক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে আমরা তাদের বিয়ে মেনে নেয়নি। এরই মধ্যে তাদের সংসারে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। পরে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের অনুরোধে তাদের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কওে প্রায় তিনবছর পরে বাবলু-আছমার বিয়ে মেনে নিয়ে বউকে ঘরে তুলি। পরে তাদের ঘরে আরো একটি সন্তান (কন্যা) জন্ম নেয়। বিয়ে মেনে নেয়ার কিছুদিন পর থেকেই আছমার ভাই সালেহ আহমদের প্ররোচণায় বিভিন্নভাবে তারা আমার ছেলেকে হয়রানি করতে থাকে। একবার বাবলুর সাথে ঝগড়ার জেরে আছমার পরিবারের লোকজন আমার ছেলের গাড়ীতে মাদক রেখে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এই সুযোগে তাদের নামে গাড়ীর ভুয়া কাগজপত্র আদালতে দেখিয়ে আমার ছেলের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-গ-৪৫-৬২১২) নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গ্রাম্য শালিস-বৈঠকে কামরুল হাসানকে তার গাড়ীটি ফেরৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও অদ্যবদি তারা প্রাইভেটকারটি ফেরৎ দেয়নি। এছাড়াও আছমার দুই ভাইকে বিদেশ পাঠানোর সময় তারা আমার ছেলের কাছ থেকে কয়েকধাপে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা হাওলাত নেয় যা পরবর্তীতে তারা অস্বীকার করে। এত অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও আমার ছেলে তার সন্তানদের কথা চিন্তা করে সংসার জীবনযাপন করে আসছিলো। এরপর বিভিন্ন সময় আছমার প্ররোচনায় তার পরিবারের লোকজন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনে আমার বাড়ীতে হামলা ও ভাংচুর করে। যা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অবহিত রয়েছে। অল্প কিছুদিন পূর্বে আছমা তার ভাইদের সহযোগিতায় সন্ত্রাসী দিয়ে আমার ছেলেকে অপহরণ করে আটকে রেখে পছন্ড মারধর করায়। এরপর তারা আমার ছেলের মুক্তিপনের টাকা পরিশোধের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে কামরুলের আরেকটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-০৮৬১) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার বিজয় নামে এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করে। আমার ছেলে কামরুল হাসান বাদী হয়ে অবৈধ পন্থায় গাড়ী বিক্রির অভিযোগ এনে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ (এসডিআর নং ২১৯৬-২৩) দায়ের করে। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের তৎপরতায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ওই গাড়ীটি আটক করে এবং বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা জজকোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলা (মামলা নং ৪৭ (৬)-২৩) চলমান রয়েছে। এদিকে বেপরোয়া আছমা আক্তারের অত্যাচার ও নির্যাতন দিনদিন বেড়েই চলে। এরপর আমার ছেলে জগন্য এ পরিবারের কবল থেকে মুক্তি পেতে আদালতের মাধ্যমে আছমা আক্তারকে গত ১৭ জুন-২০২৩ এ তালাক দেয়। তালাকের নোটিশ পেয়ে আছমা আক্তার ক্ষিপ্ত হয়ে তালাক দেয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে সে আমাদের বিরুদ্ধে যৌতুক ও নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ এনে সম্মানহানীর হীন উদ্দেশ্য আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত ৬নং ঘোলপাশা ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টির তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে চেয়ারম্যান সাহেব উভয় পরিবারকে পরিষদে ডাকেন। বাদী পক্ষ সামাজিক বিচার না মানার কারণে বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তাদের এসব হয়রানির ফলে আমার ছেলের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে।’ এ সময় তিনি এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সঠিক সংবাদটি প্রকাশের অনুরোধ জানান সাংবাদিকদের নিকট।
এ ব্যাপারে জানতে আছমা আক্তারকে মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দেন। পরে কল দিলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ঘোলপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এ কে খোকন বলেন, ‘আদালতের নোটিশ পেয়ে আছমা আক্তার ও কামরুল হাসানের পরিবারকে পরিষদে ডাকি। স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের সহযোগিতায় বিষয়টি মীমাংশার চেষ্টা করেছি। বাদী পক্ষ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করবে বলে অনঢ় অবস্থান নেয়ায় তা সম্ভব হয়নি। আদালতের চাহিদার প্রেক্ষিতে শীঘ্রই প্রতিবেদন দিয়ে দিব।’