চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধার কবরের নামফলক ভাংচুর, ইউএনও এর হস্তক্ষেপে সংস্কারের উদ্যোগ

0
405

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মরহুম তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী নামে এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার কবরের নাম ফলক ভাংচুর এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের মহাসড়ক সংলগ্ন বসন্তপুর পূর্বপাড়া পাটোয়ারী বাড়ীর কবরস্থানে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে নামফলক মেরামত ও সংযোজনের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগিরা সহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড কাউন্সিল।

জানা গেছে, ‘গত কিছুদিন পূর্বে বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ পাটোয়ারী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর কবর খুঁড়তে গিয়ে একই এলাকার রওশন আরা নামে এক মহিলার কবরের নামফলক ভেঙ্গে যায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহিলার ছেলে স্বপন ওই কবরস্থানের কেয়ারটেকার গিয়াস উদ্দিনের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয়। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বা’দ জুমআ বিষয়টি নিয়ে পাটোয়ারী বাড়ী জামে মসজিদ কমিটি মুসল্লিদের নিয়ে বসে। এতে মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ও বসন্তপুর মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা নোয়াখালীর হুজুরের কবর ছাড়া বাকী সবগুলো কবরের নামফলক ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে শুক্রবার বেলা আড়াইটায় কতিপয় অতি উৎসাহী যুবক ওই কবরস্থানের বিভিন্ন কবরের নামফলক ভেঙ্গে ফেলে এবং ভাঙ্গার ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলামের কবরের নামফলকও ভেঙ্গে ফেলে তারা। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। যাতে দেখা যায়, উত্তেজিত যুবকরা মুক্তিযোদ্ধার কবর সহ বিভিন্ন কবরের নামফলকে লাথি মেরে ও হাতুড়ির আঘাতে ভাংচুর করে। ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সহ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মরহুম তাজুল ইসলামের ছেলে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সামাজিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা এবং নোয়াখালীর হুজুরের কবর ব্যতিত অন্যান্য কবরগুলোর নামফলক ভাঙ্গার বিষয়ে মসজিদে আলোচনা হয়। কিন্তু কতিপয় যুবক আমার বাবার নামফলকটিও ভেঙ্গে ফেলে। আমি এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বাতিসা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আমির হোসেন মজুমদার মানিক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার কবরের নামফলক ভাঙ্গা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি উপজেলা কমান্ডার ও ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করেছি। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ড কাউন্সিল এর সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘লাথি মেরে কবরের নামফলক ভাংচুর করা যে কোনো কবরের ক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। মুক্তিযোদ্ধার কবরের নামফলক ভাংচুরের বিষয়টি জানার পরেই আমি ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। শীঘ্রই নামফলক সংযোজন করা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করা হয়েছে।’

বাতিসা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী ফখরুল আলম ফরহাদ বলেন, ‘স্থানীয় যুবকরা ভুলবশতঃ মুক্তিযোদ্ধার কবরের নামফলকটি ভেঙ্গে ফেলে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ইতোমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে নামফলকটি সংস্কার করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার কবরের নামফলক যে প্রক্রিয়ায় ভাঙ্গা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ঘটনা শোনার পরই আমি সার্কেল এএসপিকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ভিডিও দেখে দোষিদের চিহিৃত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে থানা প্রশাসনকে বলা হয়েছে।’