চৌদ্দগ্রামে মৌ চাষ ও মধু আহরণে ২ মৌয়ালের ভাগ্য বদল

0
474

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মৌ চাষ ও মধু আহরণ করে ভাগ্য বাদল করেছেন দুই মধু চাষি। তারা হলেন: উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের হাজারী পাড়া গ্রামের মরহুম আলী মিয়ার ছেলে আব্দুল মমিন ও লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের সিংহরিয়া গ্রামের আমিন আলী ছেলে মোহাম্মদ ফারুক।

জানা গেছে, আব্দুল মমিন ৭ বছর আগে ঢাকার মুগদাপাড়া এলাকা থেকে ১৪ হাজার টাকায় ২টি রাণীসহ মৌমাছি এনে আধুনিক পদ্ধতিতে দু’টি বক্সে মৌ চাষ শুরু করেন। আর মোহাম্মদ ফারুক টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে ২২ হাজার টাকার বিনিময়ে ৪টি রাণী সহ মৌমাছি এনে মৌ চাষ শুরু করেন। উপযোগি ও অনুকুল পরিবেশের এসব খামারে এপিস সিরেনা, এপিস ডরসেটা, এপিস ফ্লোরিয়া, এপিস মেলিফেরা, দেশীয় ক্ষুদে মৌমাছিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এ মৌমাছিগুলো লিচু, ধনিয়া, সরিষা ও কালোজিরা, বড়ই সহ বিভিন্ন গাছে ঘুরে ঘুরে ফুলের পরাগায়ন নিশ্চিত করণের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করে মৌ বক্সে জমায়েত করে। পরে চাষিরা আধুনিক পদ্ধতিতে বক্স থেকে এ মধু সংগ্রহ, শোধন ও বোতলজাত করে বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করেন। বাড়ির পাশে উঁচু ভিটায় আড়াআড়ি ভাবে বসানো দু’টি খামারে প্রায় ৬০টি মৌ বক্স রয়েছে। সিজনে প্রতি সপ্তাহে এ বক্সগুলো থেকে প্লেট বের করে মধু সংগ্রহ করা যায়। এলাকায় ফুলের সমারোহ থাকলে আনসিজনেও কৃত্রিম এ খামারগুলোতে প্রচুর পরিমাণ মধু পাওয়া যায়। তবে, আনসিজনে খাদ্যের অভাবে বাচ্চা মৌমাছিরা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় মৌ বক্সে খাদ্যের যোগান দিতে হয়। বর্তমানে মৌ খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে কখনো কখনো খামারিদের কিছুটা লোকসানও গুনতে হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতা পেয়ে উভয়ে পরীক্ষামূলকভাবে বক্স বৃদ্ধি করে গড়ে তুলেন বানিজ্যিক মৌ খামার। মৌ চাষ ও মধু সংগ্রহ ব্যবসা লাভের মুখ দেখায় ধীরে ধীরে আব্দুল মমিন ও মোহাম্মদ ফারুক খামারের পরিধি বাড়ান। সিজনে প্রতিমাসে ৫০-৬০ কেজি মধু সংগহ হয় এসব খামার থেকে। এতে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয় তাদের। যা দিয়ে তারা স্বাচ্ছন্দে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। এভাবেই ভাগ্য বদলে যায় মৌ চাষি আব্দুল মমিন ও মোহাম্মদ ফারুকের।

মধু বিক্রির আয় দিয়ে আব্দুল মমিন ও মোহাম্মদ ফারুক সন্তানদের শিক্ষিত করা সহ বিদেশ প্রেরণ ও বিয়েশাদী দিয়েছেন। নিজেরা হয়েছেন স্বাবলম্বী। তাদের এ মৌ খামার থেকে খাঁটি মধু ক্রয় করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে লোকজন।

মৌ চাষি আব্দুল মমিন বলেন, ‘মধু বিক্রি করে আমার ছেলে-মেয়েদেরকে লেখাপড়া করিয়েছি। এ আয়ে ভালোভাবেই আমার সংসার চলে। মৌ চাষে সফলতা অর্জন করায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একাধিকবার কৃষি পুরস্কার ও সনদ অর্জন করেছি। মৌ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক পণোদনাসহ মৌ-খাদ্যের দাম কমাতে বিশেষ ভূমিকা প্রয়োজন। আশা করছি সরকার এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

অপর চাষি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘ব্যক্তি উদ্যোগে মৌ চাষ শুরু করি। কিছুটা সফলতা অর্জন করায় মৌ খামারের পরিধি বৃদ্ধি করি। দুঃখজনক হলেও সত্যি, সরকার আমাদের কোন খোঁজ-খবর রাখেনা। মৌ খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তারপরও শিল্পটাকে ভালোবেসে এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি। সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন হবে।’

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন বলেন, ‘মৌ শিল্পকে বানিজ্যিকভাবে টিকিয়ে রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। সরকারের পক্ষ থেকে মৌ চাষিদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিষয়টি তদারকির জন্য কৃষি অফিসারকে বলা হয়েছে।’