মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে রোপা আমনের ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি মৌসুসে রোপা আমন ধানের ফলনে উপজেলার কৃষকরা বেশ আনন্দিত। সোনালী ধান তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থাকলেও দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রান্তিক লড়াকু কৃষক সমাজকে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ফসল ফলিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সেই ফসলের সবুজ-সোনালী ঢেউ এখন কৃষকদেরকে স্বপ্ন দেখায় ভালো ফলন আর ভালো দামের। করোনা ভাইরাসকে উপেক্ষা করে কৃষকরা এখনো দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দিগন্তজোড়া সবুজ ধানক্ষেত দিনে দিনে হয়ে উঠছে সোনালী বরণ। হিমেল হাওয়ায় দুলছে সোনালী ধানের শীষ। ধানের সোনালী এ শীষ যেন বলছে ‘আমরা শুধু ফসলই নই, আমরা আসলে হাজারো কৃষকের মুখের হাসি। কিছু কিছু এলাকায় স্বল্প পরিসরে ধান কাটা শুরু হলেও আর অল্প কিছুদিন পরেই বৃহৎ পরিসরে আমন ধান কাটা শুরু হবে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ইতিমধ্যেই সে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অর্জিত ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে উফশি, রঞ্জিত, বিআর-২২, বিআর-২৮, বিআর-৪৯, বিআর-৮৭, স্বর্ণবাসুরী, পায়জাম, কালোজিরা প্রভৃতি জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার পৌরসভার ফাল্গুনকরা, উজীরপুর, মুন্সীরহাট, কনকাপৈত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধানক্ষেতের মধ্যে পোতা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডালের উপর বসে ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েল সহ নানা প্রজাতির পাখি সুযোগ বুঝে ধান গাছের ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলছে। নতুন ধান ঘরে তোলার অধীর অপেক্ষায় কৃষক-কৃষাণীরা। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই রোপা আমন ধান কাটা শুরু হয়। রোপা আমন কাটার মৌসুমকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে ধানকাটার শ্রমিক আসা শুরু করেছে। পৌর এলাকার ফালগুনকরা গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন জানান, ২৪০ শতক জমিতে এবার রোপা আমনের চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকা সহ প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। ধান কাটার সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ইদুরের আক্রমণ না থাকলে ভালো ফলনের ব্যাপারে আশাবাদী।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, “চৌদ্দগ্রাম পৌরএলাকা সহ ১৩টি ইউনিয়নে আমন ধানের সোনালী ঢেউ খেলছে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের মধ্যেও সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি উপকরণ সহ সকল কৃষি সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছি কৃষকদের মাঝে। আমি সহ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকের জমিতে গিয়ে ফসলের তদারকি সহ পরামর্শ দিয়ে আসছি। রোপা আমন কাটা পর্যন্ত এ পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এবার রোপা আমানের উৎপাদন ও সংগ্রহে প্রত্যাশার মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি জানান”।