স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে শাশুড়ির নির্যাতনের শিকার হয়ে ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন খাদিজা আক্তার নামে এক গৃহবধু। সে উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী মো: মামুনের স্ত্রী এবং পাশ্ববর্তী শুভপুর ইউনিয়নের কৈয়ারধারী গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের তৃতীয় মেয়ে। শুক্রবার সকালে ঢাকায় ময়নাতদন্ত শেষে খাদিজার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে শাহাবাগ থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ বছর আগে মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের দুবাই প্রবাসী মো: মামুন মজুমদারের সাথে খাদিজার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে খাদিজার স্বামী মামুন চাকুরির সুবাদে দুবাই অবস্থান করছেন। এরই মাঝে খাদিজার শাশুড়ি নিলুফা বেগম বিভিন্ন সময়ে কারণে- অকারণে খাদিজাকে কটু কথা বলতেন। খাদিজা প্রতিবাদ করলে তাকে মানসিক নির্যাতনসহ মারধর করতেন। শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে সে প্রায় সময় বাবার বাড়িতে চলে যেত। পরে স্বামীর অনুরোধে আবারও শশুর বাড়িতে ফিরে আসতো।
এবিষয়ে খাদিজা আক্তারের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে খাদিজার শাশুড়ি নিলুফা বেগম তার মেয়ের উপর বিভিন্ন সময় মারধরসহ মানসিক নির্যাতন করতেন। এই নিয়ে দুই গ্রামের শালিসদারদের নিয়ে একাধিকবার শালিস বৈঠক হয়েছে। খাদিজা তার দুই সন্তানের কথা চিন্তা করে এবং দুবাই প্রবাসী স্বামীর অনুরোধে শশুর বাড়িতে ফিরে যেতো। গত ৩১ জুলাই খাদিজার স্বামী মো: মামুন দুবাই থেকে ফোন করে বলে খাদিজার অবস্থা ভালো নয়, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। খাদিজার চিকিৎসার জন্য ২ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় যেতে বলে ফোন কেটে দেয়। পরে আমি খবর নিলে তার শশুড় বাড়ির লোকজন আমাকে জানায়, খাদিজা ২৯ জুলাই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে আশ-পাশের লোকজনের সহায়তায় শাশুড়ি নিলুফা খাদিজাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। আমি ঢাকা হাসপাতালে যাওয়ার পর তার শাশুড়ি পালিয়ে যায়। ১৫ দিন চিকিৎসার পর বৃহস্পতিবার রাতে খাদিজা আক্তার মারা যায়’।
সেলিনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেনা। তার শাশুড়ি তাকে নির্যাতন করে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল। আশপাশের লোকজন দেখে ফেলায় এখন বলছে-আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছে’।
খাদিজা আক্তারের চাচাতো ভাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, ‘খাদিজাকে তার শাশুড়ি সবসময় নির্যাতন করতো। তাকে তার শাশুড়ি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। খাদিজার নির্যাতনের বিষয়ে আগে থানায় কোন অভিযোগ করেছেন কি না জানতে চাই তিনি বলেন, মনে করেছিলাম একটা সময় সব ঠিক হয়ে যাবে। তার জন্য থানায় কোন অভিযোগ করি নাই। যদি করতাম, তাহলে হয়তো খাদিজাকে এভাবে জীবন দিতে হতো না’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, ‘ভুক্তভোগীর পরিবার নির্যাতনের বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ করেনি। এখন গৃহবধূর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে আমরা দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।