চৌদ্দগ্রামে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ, ৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ

0
219

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি নতুন বহুতল ভবন নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার সহ কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় চারতলা বিশিষ্ট বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও কাজটি শেষ না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা সহ স্থানীয় সচেতন মহল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যারফলে ভোগান্তিতে পড়ছে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ২০১৯ সালে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের বাকগ্রাম কাজী আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটির নির্মাণকাজ পায় কুমিল্লা আদর্শ সদরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরশাদ এন্ড সন্স। ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে আলকরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক হেলাল এর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার, যথাযথ গুণগত মান ঠিক না রাখা ও কাজে বিলম্ব করা সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হয়। সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আখের, শরীফ উল্লাহ, রাকিব উদ্দিন নিলয়, জোবায়ের হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, কাজী মুনতাহা সাবরিন, ইসরাত জাহান উর্মী ও ফাতেমা আক্তার মারুফা জানান, ‘পাঁচ বছর ধরে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

সিনিয়র শিক্ষক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আলকরা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ করছে। নির্মাণ সামগ্রী ও কাজের মানের বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করায় তিনি শিক্ষকদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।’

প্রধান শিক্ষক মো: মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি এসেছি বেশিদিন হয়নি। আসার পর থেকেই দেখছি নতুন ভবন নির্মাণের কাজ ধীরগতিতে চলছে। নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠায় একবার কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, কুমিল্লা। ভবন নির্মাণে বিলম্ব হওয়ায় স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া সহ নানা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। আশা করছি যথাযথ মান ঠিক রেখে কাজটি দ্রæত শেষ করবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।’

বিদ্যালয়ের সভাপতি মো: আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ছয় বছর ধরে চলছে কাজ। কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। আশা করছি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজে সিলেকশান বালুর স্থানে ভিটি বালু দিয়ে ছাদ ঢালাই করেছে ঠিকাদার। ঢালাইতে সঠিক পরিমাণে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতের ছোঁয়ায় ছাদের ঢালাই এবং দেয়ালের আস্তর খসে পড়ছে। দুই-তিন নম্বর ইট দিয়ে দেয়ালের গাঁথুনি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। ভূমিকম্প বা যেকোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগে ভবনটি ভেঙ্গে যেতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভবন পরিদর্শন করে দেখেছি কাজের মান অত্যন্ত খারাপ। একজন সাবেক চেয়ারম্যান তার নিজ এলাকায় কিভাবে এত খারাপ কাজ করেন এটা আমার বুঝে আসে না। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করবে বলে প্রত্যাশা করি।’

এ ব্যাপারে ঠিকাদার গোলাম ফারুক হেলাল বলেন, ‘২০১৮ সালের একটি কাজ কোভিড-১৯ এর কারণে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়। নির্মাণ সামগ্রীর অতিরিক্ত মূলবৃদ্ধির ফলে কাজের মান ঠিক রাখা বেশ মুশকিল হচ্ছে। তারপরও গুনগত মানের বিষয়ে তিল পরিমাণ ছাড় দেইনি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজের মান যাচাই করেছে বহুবার। অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে কাজ চলে। একই প্রকল্পের অনেক কাজ ঠিকাদাররা জামানতের আশা ছেড়ে দিয়ে বন্ধ করে চলে গেছে। নিজ এলাকার কাজ বলে লোকসান হওয়া স্বত্ত্বেও কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছি।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রুবেল মিয়া বলেন, ‘নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার ও কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠায় একবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে, গুণগত মান ঠিক রেখে কাজটি স্বল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হবে।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, কুমিল্লা এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আলী ইমাম বলেন, ‘নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে স্কুল ভবন নির্মাণ আইনত দন্ডনীয়। কোভিড-১৯ এর কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হয়েছে। কাজটি পরিদর্শন করবো। গুণগত মান ঠিক রেখে দ্রুত কাজটি শেষ করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’