চৌদ্দগ্রামে সৎ মা কর্তৃক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ

0
248

মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সালমা বেগম নামে এক সৎ মা কর্তৃক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় প্রতিবন্ধী ওই মেয়ের গলায় ওড়না পেঁছিয়ে তাকে হত্যা চেষ্টা করা হয় বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগি ওই মেয়ের নাম মোসা: রাত্রি আক্তার। তার বয়স আনুমানিক ২০ বছর। সে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের মো: নাছির উদ্দিনের তৃতীয় মেয়ে।

জানা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গান্দাছি পূর্বপাড়ার মো: নাছির উদ্দিন ৩০ বছর পূর্বে একই এলাকার বিলকিস আক্তার নামে এক নারীকে শরীয়াহ মোতাবেক সামাজিকভাবে বিবাহ করেন। দীর্ঘ সংসার জীবনে তাদের চার কন্যা ও এক পুত্র সন্তান হয়। সন্তানদের মধ্যে রাত্রি আক্তার নামে নাছিরের এক মেয়ে জন্মগতভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলো। তারপরও ভালোভাবেই চলছিলো নাছির-বিলকিসের সংসার জীবন। একপর্যায়ে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হলে তাদের সংসারটি ভেঙ্গে যায় এবং নাছির উদ্দিন তার স্ত্রী বিলকিসকে তালাক দেন। পরবর্তীতে নাছির উদ্দিন কালিকাপুর ইউনিয়নের জামপুড়া গ্রামের সালমা আক্তার নামে আরেক নারীর সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং সংসার জীবন শুরু করেন। সালমা আক্তার নাছিরের সংসারে আসার পর থেকেই প্রতিবন্ধী রাত্রির উপর নেমে আসে নানা রকম নির্যাতন। এ বিষয়ে সালমাকে প্রতিবেশীরা বিভিন্ন সময় সতর্ক করে এবং নাছিরকেও বিষয়টি অবহিত করে। কিন্তু নাছির বিষয়টি আমলে নেয়নি কখনো। এমনকি এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নেয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। গত সপ্তাহে নাছিরের দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা তার স্বামীর আগের সংসারের প্রতিবন্ধী মেয়ে রাত্রিকে ঘরে একা পেয়ে গলায় ওড়না পেঁছিয়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করে। পরে চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে রাত্রিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করে। এ ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবন্ধী মেয়েকে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টাকারী সালমা আক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সতেচন এলাকাবাসী।

রাত্রির মামা মো: হানিফ জানান, ‘আমার এ প্রতিবন্ধী ভাগনিকে বিভিন্ন সময় তার সৎ মা সালমা মারধর করে। ঘটনার দিন তাকে প্রচুর মারধর করে। একপর্যায়ে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে টেনে-হিচড়ে প্রাণনাশের চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করায় নাছির ও সালমা সংঘবদ্ধ হয়ে আমার উপরও হামলা করে।’

এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী রাত্রি আক্তারের বাবা নাছির উদ্দিন ও তার সৎ মা সালমা আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তারা রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

শ্রীপুর ইউপি সদস্য মোহাম্মদ নয়ন জানান, ‘পত্রিকায় দেখে ব্যাপারটি জেনেছি। তবে, কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। পরে শুনেছি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। আমি এই মুহুর্তে পারিবারিক কাজে ঢাকায় আছি। এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিব।’

এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো: জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নির্যাতনের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছি। যতটুকু জেনেছি, মেয়েটির সৎ মা তাকে ঠান্ডা ভাত খেতে দিলে সে খাবেনা বলে অভিমান করে। পরে তার বাবা-মা তাকে ঘরে নিতে চায়। এ সময় টানাহেচড়ায় মেয়েটি নিজের পরিহিত ওড়নার দ্বারা গলায় আঘাত পায়। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।