মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: পঞ্চম শ্রেণি পাস মো: ইয়াকুব হোসেন। বাড়ী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের বরৈয়া গ্রামে। কৃষক বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে খুব অল্প বয়সেই সংসারের হাল ধরতে বাধ্য হন। স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রির সাথে হেলপার হিসেবে সামান্য বেতনে কাজ করতেন ইয়াকুব। গত ৫ আগস্ট (সোমবার) বিকালে ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ দলীয় সরকার পতনের পর এলাকার অন্যান্যদের সাথে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শহরে। ঐদিন বিকালে আনন্দ মিছিলকারী ছাত্র জনতা ও সাধারণ মানুষের সাথে থানা পুলিশের হামলা-পাল্টা হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ইয়াকুব হোসেন থানার দক্ষিণ পাশে নিরাপদ দূরত্বেই ছিলেন। কিন্তু বিধির লিখন, যায়না খন্ডন। এ সময় পুলিশের ছোড়া দু’টি গুলি এসে লাগে ইয়াকুবের দুই পাড়ে। বামপাশের হাটুর নিচে লাগা গুলিটি একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশ বেধ করে বেড়িয়ে যায়। আর ডানপায়ের একপাশ ঘেষে লাগা গুলিটি হাটুর নিচের চামড়া ছিড়ে নিয়ে চলে যায়। পরে অচেতন অবস্থায় উপস্থিত লোকজন তাকে উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম সরকারি হাসপাতালে নেয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুই সপ্তাহের অধিক সময় চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরলেও শারীরিক অবস্থার তেমন একটা উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নীবিড় পর্যবেক্ষণে সবসময় থাকতে হচ্ছে তাকে। প্রায় তিন সপ্তাহ পরে সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে তাকে বাড়ি থেকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য নিয়ে যায়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে কুমিল্লা সিএমএইচ হাসপাতালে এক সপ্তাহ পর্যন্ত চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। এরপর বাসায় ফিরলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা সেবা এখনো চলমান। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বিভিন্ন ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য তাহা পর্যাপ্ত নয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে।
এদিকে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বিছানায় পড়ে থাকায় মা-বাবার পক্ষে সংসার চালানো বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে। অভাবের সংসারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে প্রতিদিন ইয়াকুবের চিকিৎসা খাতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। তারপরও পরিবারের লোকজন ধৈর্য্য হারা হয়নি। একদিন সুস্থ হয়ে ইয়াকুব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে বলেই মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস।
সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎকালে রোববার দুপুরে গুলিবিদ্ধ ইয়াকুব হোসেন বলেন, উৎসুক জনতার সাথে আনন্দ মিছিল দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ মরণ যন্ত্রণায় বিছানায় কাতরাচ্ছি। প্রচন্ড ব্যাথায় রাতে ঘুমাতে পারিনা। আমার কারণে পরিবারের সকলের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসার ফলে আর্থিক সমস্যা সহ পরিবারকে পড়তে হয়েছে নানান সমস্যায়। চিকিৎসা ব্যয়ে আমার গ্রামের বিত্তবানরা সহ যুবসমাজ এগিয়ে এসেছে। তারপরও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখী আজ। আমি সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য, সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।
ইয়াকুব হোসেনের পিতা জাফর আহমেদ জানান, ছেলের এই অবস্থায় কোনো কূল পাচ্ছিনা। সমাজের লোকেরা এগিয়ে আসায় কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। এ সময় তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে মহান রবের সাহায্য প্রার্থনা করেন।
বড় বোন সাবরিনা ও হোসনা বলেন, একমাত্র ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ এক মাসের অধিক সময় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছে। চোখের সামনে কলিজার টুকরো ভাইয়ের এমন অসহায়ত্বে বোন হিসেবে সেবা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা। আমরা দোয়া করি, আল্লাহ যেন প্রিয় ভাইকে দ্রæত সুস্থতা দান করে।