মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: ফেনীর ফাযিলপুর রেলক্রসিংয়ে ট্রেন ও বালু বাহী ট্রাকের সংঘর্ষে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ৩ যুবক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে। নিহতরা হলো: উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের মো: ইয়াছিন মিয়ার ছেলে মো: সাজ্জাদ হোসেন (২০), একই গ্রামের মো: রুহুল আমিনের ছেলে মো: রিফাত (১৯) ও মৃত নূর মোহাম্মদ প্রকাশ নূর হোসেনের ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ (২১)। নিহতরা সকলে স্থানীয় ধোড়করা বাজারে ওয়ার্কসপ সহ বিভিন্ন দোকানে কাজ করতো বলে জানা গেছে।
নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটা করার লক্ষ্যে নিহত সাজ্জাদ, রিফাত ও দ্বীন মোহাম্মদ সহ ওরা এগারো বন্ধু মিলে পাশ^বর্তী নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশন থেকে শুক্রবার ভোর সাড়ে সাতটায় ট্রেনযোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। ট্রেনে ওঠার ঠিক আগমুহুর্তেই তারা স্টেশন এলাকায় যৌথ সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্টও করেছে। এরপর তাদেরকে বহনকারী যাত্রীবাহী ওই ট্রেনটি ফেনীর ফাযিলপুর রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছলে হঠাৎ করে বালুবাহী একটি ট্রাকের সাথে ট্রেনের সামনের অংশের ধাক্কা লাগে। এতে ট্রেনের প্রথম বগির সামনে বগির বাহিরে রেলিং এর সাথে থাকা চার যুবকের তিনজনই ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। অপর যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ধাক্কা খাওয়া বালুবাহী ট্রাকের চালক মিজানুর রহমান ও হেলপার আবুল খায়ের ঘটনাস্থলে এবং আশিক নামে অপর এক যাত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় নিহত হয়েছে। তবে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ এর দাবী এ দুর্ঘটনায় মোট তিনজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ট্রাক চালক-হেলপার ঘটনাস্থলে এবং অপর একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। চৌদ্দগ্রামের তিন যুবক নিহতের বিষয়টি তারা জানেনই না।
চৌদ্দগ্রামের নিহত তিন যুবকের চট্টগ্রামগামী সঙ্গী উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের মো: কেফায়েত উল্লাহ ও মো: আব্দুল্লাহ্ সাংবাদিকদের জানান, ‘ঈদের কেনাকাটার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম যাওযার উদ্দেশ্যে ভোর রাতে সাহরী খেয়ে আমরা সকলে হাসানপুর রেলস্টেশনে পৃথক পৃথকভাবে একত্রিত হই। সকাল সাড়ে সাতটায় একটি লোকাল ট্রেনে উঠে আমরা এগার জন চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। ফেনী রেলস্টেশনে যাওয়ার পর আমরা সকলে ট্রেনের বগিতে উঠে সীটে বসে পড়ি। কিন্তু স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পর দ্বীন মোহাম্মদ, রিফাত ও সাজ্জাদ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনের রেলিংয়ে গিয়ে বসে। পরে ফেনীর ফাযিলপুর রেলক্রসিং এলাকায় ট্রেনটি পৌঁছলে হঠাৎ করে একটি বালুর ট্রাক এসে ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগায় ঘটনাস্থলেই আমাদের তিন বন্ধুসহ কয়েকজন নিহত হয়েছে। পরে ট্রেনটি একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমরা দ্রুত নেমে পড়ি এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি মাইক্রোবাসে করে তিন বন্ধুর লাশ বাড়িতে নিয়ে আসি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক রেলপুলিশ এর নজরে আসেনি বলে জানিয়েছেন তারা।
নিহত সাজ্জাদের পিতা ইয়াছিন বলেন, সাহরী খেয়ে তারা বেরিয়ে যায়, সকালে আমি গরুর জন্য ঘাস কাটতে মাঠে চলে যাই। মাঠে থাকা অবস্থায়ই দুর্ঘটনার খবর পাই।’
চিওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবু তাহের জানান, ‘আমার এলাকার বেশ কয়েকজন যুবক ও কিশোর ঈদের কেনাকাটার উদ্দেশ্যে ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রাম যাচ্ছিল বলে শুনেছি। পথিমধ্যে ফেনীর ফাযিলপুর এলাকায় বালুবাহী ট্রাক ও ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষে এদের মধ্যে তিন যুবক নিহত হয়েছে। লাশ বাড়ীতে নিয়ে আসার পর বিকাল চারটায় জানাযা শেষে একই কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
ফেনী রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় চৌদ্দগ্রামের কেউ নিহত হওয়ার খবর আমার জানা নাই। তবে দুর্ঘটনায় ট্রাক চালক ও সহকারী সহ তিনজন নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি।’
রেলওয়ের পুলিশের চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো: হাসান চৌধুরী বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবরটি আমি পেয়েছি, ঘটনাস্থলে ট্রাক চালক ও সহকারী এবং হাসপাতালে আশিক নামে আরেক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।’
ফেনী রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার ইমাম উদ্দিন সেন্টু বলেন, ‘বালুবাহী একটি ট্রাক রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগে। কিছুক্ষণ রেল চলাচল বিঘ্নিত হলেও পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’