স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মুন্সীরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের মোক্তল হোসেনের ছেলে প্রবাসী মো: মামুনের স্ত্রী খাদিজা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সে পাশ্ববর্তী শুভপুর ইউনিয়নের কৈয়ারধারী গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের তৃতীয় মেয়ে। নিহতের পরিবারের দাবি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের মা সেলিনা বেগম বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) নিহতের স্বামী মামুন, শ্বশুর মোক্তল হোসেন, শ্বাশুড়ী নিলুফা বেগম ও ঝা শিমুসহ সাত জনের নাম উল্লেখপূর্বক কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে খাদিজাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বিয়ের পর থেকেই খাদিজা বহু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে দু’টি অবুঝ শিশুর কথা চিন্তা করে সংসার করে আসছিলো। নির্যাতনের এসব ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে সে কয়েকবার বাবার বাড়িতে চলে যায়। পরে স্বামীর এলাকার ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দীন রানার নেতৃত্বে উভয় পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় শালিস-বৈঠকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন অপ্রীতিকর ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটবেনা মর্মে মুচলেকা দিয়ে খাদিজাকে নিয়ে আসে স্বামীর পরিবার। মামুন বিদেশ যাওয়ার সময় ৩ লাখ টাকা নেয়া সহ ঘর নির্মাণ ও জমিক্রয় বাবদ বিভিন্ন সময় ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। গত ২৯ জুলাই একই দাবি করায় পরিবারের অক্ষমতার কথা চিন্তা করে যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে খাদিজার স্বামী মামুনের নির্দেশে তার মা-বাবা তাকে বিভিন্ন উপায়ে শারীরিক নির্যাতন করে। এতে খাদিজা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে তার শয়ন কক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। পরে বাড়ীর লোকজন এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) তার মৃত্যু হয়।
খাদিজার শ্বশুর মোক্তল হোসেন ও শ্বাশুড়ী নিলুফা বেগম জানান, ‘গত ২৯ জুলাই বিকালে খাদিজাকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আজকে তিন বছরের মধ্যে ঘরে কোনো ঝগড়াঝাটি ছিলো না। কেনো সে এমন করেছে জানি না। তার চিকিৎসা বাবদ আমরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করি’।
এ বিষয়ে খাদিজা আক্তারের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘ঘটনার পরদিন রাত দশটায় খাদিজার স্বামী মামুন দুবাই থেকে ফোন করে বলে খাদিজার অবস্থা ভালো নয়, তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এসময় সে খাদিজার চিকিৎসার জন্য ২ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় যেতে বলে ফোন কেটে দেয়। আমার মেয়ে ফাঁস দিতে পারেনা। এটা পরিকল্পিত হত্যা। শাহবাগ থানা পুলিশ কর্তৃক লাশের সুরতহাল রিপোর্টে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি এসেছে। খাদিজার সারা শরীরে কালো-নীলা ফুলা জখমের চিহৃ রয়েছে। আমি ঘনটার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি’।
এ বিষয়ে মুন্সীরহাট ইউপি’র ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার সাহাব উদ্দীন রানা বলেন, ‘দাম্পত্য জীবনে খাদিজার সাথে স্বামীর পরিবারের সমস্যা ছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে গেলে আমি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে কয়েকবার শালিস বেঠক করে খাদিজাকে তার শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে আসি। সুষ্ঠু তদন্ত স্বাপেক্ষে খাদিজার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হোক’।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, ‘খাদিজার মৃত্যুর পরে তার অভিভাবকরা আমার কাছে আসে। এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি। আদালতে মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেনেছি। নির্দেশনা পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।