মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন নামে এক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীকে কোটি টাকার ঋণ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ১৩ লাখ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে মহিম উদ্দিন নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। মহিম উদ্দিন উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের মফিজুর রহমান সরকারের ছেলে। এদিকে ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী তার টাকা ফেরত চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা দিয়ে তাকে হয়রানী করছে প্রতারক মহিম। এমন ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (০৪ জুন) দুপুরে স্থানীয় একটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন। তিনি উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের সাঙ্গিশ^র গ্রামের মৃত ইউসুফ ভূঁইয়ার ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন উল্লেখ করেন, পেশায় তিনি একজন পোল্ট্রি খামার ব্যবসায়ী। ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও ব্যাংকের নিকট ঋণ পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে পরিচয় হয় আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামের মফিজুর রহমান সরকারের ছেলে মহিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি নিজেকে সোনালী ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী স্বপনকে এক কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। ব্যাংক ঋণের বিপরীতে খরচ বাবদ ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান। তবেই এক মাসের মধ্যে ঋণ পাস হয়ে যাবে। এতে প্রলোভনে পড়ে রাজী হন মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপন। কাগজপত্র তৈরির কথা বলে মহিম উদ্দিন ধাপে ধাপে বিভিন্ন মাধ্যমে ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। ঋণের গ্যারান্টি হিসেবে ব্যবসায়ীর নিজ নামীয় অ্যাকাউন্ট এর ২টি অলিখিত চেক ও অলিখিত দুইটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় ওই প্রতারক। এর কিছুদিন পরে মহিম উদ্দিন ব্যবসায়ী মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপনের ইমোতে সোনালী ব্যাংকের একটি কাঠাছেড়া চেকে এক কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে মর্মে লিখিত একটি চেক পাঠায় এবং বাকী আরও দুই লাখ টাকা চেয়ে বসে। চেকের বিষয়টি স্বপনের সন্দেহ হলে মুঠোফোনে মহিম উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন করে দেন। এরপর মহিম উদ্দিনের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বিষয়টি বুঝতে পেরে সোনালী ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখায় যোগাযোগ করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, মহিম উদ্দিন নামে কোন ব্যক্তি এ শাখায় নেই এবং কোটি টাকার কোন ঋণও অনুমোদন হয়নি। এরপর থেকে মহিম উদ্দিনের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া বদৌলতে টাকা পাওয়ার দাবি করে আদালতে মামলা করে হয়রানী করে আসছে।
ব্যবসায়ী আরও বলেন, প্রতারক মহিম উদ্দিনকে ধরতে আইন প্রয়োগকারী একাধিক সংস্থার কাছে যান এবং তার বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী মনসুর হায়দার ভূঁইয়া স্বপনের চাচা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, স্ত্রী তাসলিমা বেগম, বোন নাজনীন আক্তার, প্রতিবেশি আজিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো: ফরিদ উদ্দিন ও আবদুল কাইয়ুম ভূঁইয়া।
এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো: জহুর আহমেদ বলেন, ‘মহিম উদ্দিন নামে আমাদের শাখায় কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই। বিগত পাঁচ বছরে এ শাখা থেকে একসাথে এক কোটি টাকার কোন ঋণ অনুমোদন হয়নি’।
এ বিষয়ে জানতে প্রতারক মহিম উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।